গুগল অ্যাডসেন্স সম্পর্কে জানুন (নতুনদের জন্য)

আবার অনেকেই কিছুটা জানেন। যেহেতু আমরা ব্লগ থেকে করার চিন্তা করছি এবং আয়ের উপায়গুলি জানতে চাচ্ছি, সেহেতু ব্লগ থেকে আয়ের প্রধান এবং সবচেয়ে ভালো উপায় গুগল এডসেন্স সম্পর্কে জানতে হবে।

গুগল এডসেন্স কি?

আমাদেরকে সবার প্রথমে জানতে হবে যে, গুগল এডসেন্স কি? গুগল এডসেন্স হল সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের একটা সার্ভিস। এটার মাধ্যমে গুগল ব্লগারদের ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে এবং তার বিনিময়ে ব্লগারদেরকে টাকা দেয়। ব্লগ থেকে ইনকামের এটাই সবচেয়ে বড় এবং বহুল ব্যাবহৃত উপায়।

গুগল কেন আমাদেরকে টাকা দেয়?

গুগলের আরেকটা সার্ভিস আছে, যার নাম গুগল এডওয়ার্ড। গুগল এডওয়ার্ড এর মাধ্যমে গুগল বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠানের কাছ তাদের ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারনার চুক্তিতে টাকা নেয়। তারপর এডসেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে গুগল বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ব্লগে টাকা প্রদানকৃত ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করায়। এখন গুগল যত টাকা আয় করে তার থেকে ওয়েবসাইট বা ব্লগের মালিকদেরকে ৬৮% পরিমান অর্থ প্রদান করে এবং বাকি ৩২% অর্থ সার্ভিস পরিচালনা ব্যয় হিসেবে গুগল রেখে দেয়।

গুগল ওয়েবসাইট বা ব্লগের মালিকদেরকে মাসে কত টাকা দেয়?

কিছুদিন আগে আমাকে একজন প্রশ্ন করেছিল যে, গুগল আপনাকে মাসে কত টাকা দেয়। এরকম ধারণা অনেকেরই আছে যে কষ্ট করে গুগল এডসেন্স একাউন্ট পেয়ে গেলেই গুগল আমাকে মাসে মাসে টাকা দিবে। যাদের এরকম ধারণা আছে, তারা এবার কথাটা জানুন।
গুগল আপনাকে মাসে মাসে কোন টাকা দিবে না, কারন গুগল আপনাকে চাকরি দেয়নি। আপনার ব্লগের মাধ্যমে যদি গুগলের কোন ইনকাম না হয়, গুগল কেন আপনাকে টাকা দিবে?
এডসেন্স এর টাকার পরিমান নির্ভর করে ব্লগের ভিজিটর এর উপর। আপনার যদি প্রচুর ভিজিটর থাকে তাহলে আপনি ভালো আয় করতে পারবেন অন্যথায় পারবেন না। গুগল আপনার সাইটে বিজ্ঞাপন অর্থাৎ অন্য ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক প্রদর্শন করাবে, এখন আপনার ব্লগের ভিজিটর যদি সেই লিঙ্কে ক্লিক করে বিজ্ঞাপন দাতার ওয়েবসাইটে যায় তাহলেই আপনি টাকা পাবেন।

কিভাবে টাকা হাতে পাব?

গুগল ব্লগারদেরকে তিন ভাবে টাকা দেয়। ১. Western Union এবং ২. ব্যাঙ্ক চেক এর মাধ্যমে ৩.ব্যাংক একাউন্ট(এই পদ্ধতিটা নতুন যুক্ত হয়েছে)।৩ নম্বর পদ্ধতিটা ভালো তাই আমরা এটাই ব্যবহার করব। আপনার একাউন্টে $100 বা তার বেশি জমা হলে প্রত্যেক মাসের ২৯-৩০ তারিখের মধ্যে আপনার ব্যাংক একাউন্ট এ পাঠানো হবে।
চেক আসতে নরমালি পোস্ট-অফিসের মাধ্যমে আনলে ২০-২৫ দিন সময় নেয়। এর আপনি যদি DHL কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আনেন তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই পেয়ে যাবেন (এক্ষেত্রে ৩০ ডলার কেটে নেয়া হবে)। চেক হাতে পাওয়ার পর চেকটি যে কোন ব্যাঙ্কে জমা দিলেই আপনার একাউন্টে টাকা জমা হয়ে যাবে। টাকা জমা হতেও কিছুদিন সময় লাগে।
তাই আমাদের এতো কষ্ট করার দরকার নেই আমরা ব্যাংক এর মাধ্যমেই টাকা হাতে আনব।

গুগলের এড ব্লগে বসালেই কি টাকা আসা শুরু হবে?

গুগলের এড ব্লগে বসালেই টাকা আসা শুরু হবে এটা আরেকটা ভুল ধারণা। অনেকেই মনে করেন ব্লগে এড বসালেই টাকা আসা শুরু হবে। আমি নিশ্চিত প্রত্যেক ব্লগারই এই কথা ভাবেন। কিন্তু এডসেন্স একাউন্ট পাবার পরে তারা আসল বিষয়টি বুঝতে পারেন। এটা ভাবা আসলে কোন দোষের কিছু নয়। আমিও একসময় এটাই ভাবতাম, কিন্তু এখন বুঝি যে আসলে এডসেন্স থেকে আয় করা এত সহজ না। এডসেন্স থেকে আয় করতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে প্রচুর ট্রাফিক। অনেকেই বলেন যে আমার সাইটে দৈনিক ১০০০-১২০০ ভিজিটর আসে। তাদেরকে বলছি আপনি কি কখনো আপনার সাইটের বাউন্স রেট দেখেছেন? শুধু ভিজিটর আসলেই হবে না, ভিজিটর কে সন্তুষ্টও করতে হবে। একজন ভিজিটর যখন আপনার সাইটে সন্তুষ্ট হওয়ার মত কিছু পাবে, নিশ্চয় তখন কিছু সময় আপনার সাইটে থাকবে। এর যখন একজন ভিজিটর কিছুক্ষণ আপনার সাইটে থাকবে তখন আপনার সাইটে বিজ্ঞাপনের দিকে তার নজর দিবে এবং ক্লিক দিবে। অন্যথায় ভিজিটর এসে যদি আপনার সাইটে কিছু না পায়, তাহলে নিশ্চয় সে আপনার সাইটে থাকবেনা। সাইটে ভিজিটর না থাকলে বিজ্ঞাপনে ক্লিক পরার কোন সম্ভাবনা নেই। এর বিজ্ঞাপনে ক্লিক না পরলে টাকা আয়ের প্রশ্নই আসে না। এখন বলুন গুগলের এড ব্লগে বসালেই কি টাকা আসা শুরু হবে?

কিভাবে বুঝব আমার সাইট এডসেন্স উপযোগী কিনা?

ব্লগিং স্কুলের ফেসবুক গ্রুপে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন যে, কিভাবে বুঝব আমার সাইট এডসেন্স উপযোগী কিনা? নিজের ব্লগটিকে এডমিন হিসেবে না দেখে ভিজিটর হিসেবে দেখুন। আমি নিশ্চিত আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। তারপরেও যদি বুঝতে না পারেন যে, আমার সাইটে কোন সমস্যা আছে কিনা। তাহলে সোজা গিয়ে এডসেন্স এ এপ্লাই করুন। আপনার সাইট ভালো হলে গুগল আপনাকে এডসেন্স দিয়ে দিবে অথবা কি সমস্যা আছে সেটা বলে দিবে। আমিও কিন্তু এভাবেই এডসেন্স পেয়েছিলাম। যাই হোক, ভালো মানের কন্টেন্ট লিখুন অবশ্যই এডসেন্স পাবেন। গুগল শুধুমাত্র কন্টেন্টই দেখে, ডিজাইনটা দেখে না। অনেকেই বলে যে, ভাই আমার সাইটের ডিজাইনটা দেখেন। আরে ভাই, ভিজিটর এসে কি বসে বসে আপনার ডিজাইন দেখবে? ডিজাইন এর পিছনে সময় নষ্ট না করে প্রচুর এবং ভালো কুয়ালিটির আর্টিকেল লিখুন।

এডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভ হওয়ার প্রধান শর্ত সমুহঃ

  • অবশ্যই ১০-১২ ভালো কুয়ালিটির আরটিকেল থাকতে হবে।
  • অন্য কোন কোম্পানির এড থাকা যাবে না।
  • পপ-আপ উইন্ডো যেমনঃ ফেসবুক লাইক বক্স থাকা যাবে না।
  • কপি-পেস্ট কন্টেন্ট থাকা যাবে না।
  • কপিরাইট আইন ভঙ্গ করে এমন কিছু রাখা যাবে না।
  • এডাল্ট, হ্যাকিং, কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে এমন কোন কন্টেন্ট থাকা যাবে না।
  • অনেকে বলেন ভালো ভিজিটর থাকতে হবে। আমি বলি না, কোন ভিজিটরের প্রয়োজন নেই (সম্পূর্ণ আমার মতামত)।
  • গুগল সমর্থন করে না এমন কোন ভাষার কন্টেন্ট থাকা যাবে না। (যেমনঃ বাংলা ভাষা গুগপ্ল সমর্থন করে না)
  • টপ লেভেল ডোমেইন হতে হবে। অর্থাৎ সাব-ডোমেইন হলে একাউন্ট এপ্রুভ হবে না। (তবে ব্লগস্পট এর বিষয়টা আলাদা)
এই বিষয় গুলি মেনে চললেই আপনি পেয়ে যেতে পারেন এডসেন্স একাউন্ট। আর নিয়মিত পরিশ্রম করলে একদিন আপনিও মাসে আয় করতে পারবেন হাজার হাজার ডলার।

প্রিয় পাঠক, পোস্টটি পড়ার পর আপনার ভালো লাগা, মন্দ লাগা, জিজ্ঞাসা কিংবা পরামর্শ প্রদানের জন্য দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য প্রদান করুন। যা আমাদের ব্লগিং চালিয়ে যেতে অনেক উৎসাহ অনুপ্রেরণা জাগাবে। আর প্রাসঙ্গিক যেকোন প্রশ্নের সমাধান পেতে মেইল করুন contact@projukte.com ঠিকানায় অথবা অধিক জরুরী প্রয়োজনে কল করুন ০১৭৫৪৭২০২৫৫ নম্বরে। আপনার একটি মন্তব্যই আমাদের নিকট অনেক মূল্যবান। সাথেই থাকুন প্রযুক্তি ডট কম বাংলা ব্লগের সাথে।
ধন্যবাদান্তে,
প্রযুক্তি ডট কম

আপনার মূল্যবান মন্তব্য প্রদানের জন্য ধন্যবাদ