জোড়াতালিতে চলছে ৪৯ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট@!

দেশের ৪৯ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট চলছে জোড়াতালি দিয়ে। প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি আছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। বিয়ষ-ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় এক বিষয়ের শিক্ষক পড়ান অন্য বিষয়। ফলে শিক্ষকের ভোগান্তি যেমন বাড়ছে, তেমনি অন্য বিষয়ের শিক্ষক ক্লাস নেয়ার কারণে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

পলিটেকনিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে অধিদপ্তর আগ্রহী। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট সমাধানে ততটা উদ্যোগী নয়—এমন অভিযোগ শিক্ষকদের। প্রতি বছর কয়েক হাজার নতুন শিক্ষার্থী নিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও ৪৯ পলিটেকিনিকে খালি পড়ে আছে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষকের পদ। অধিকাংশ কলেজে নেই উপাধ্যক্ষ। পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে অর্ধেকের বেশি পলিটেকনিক কলেজ। যেখানে শিক্ষকের চরম সংকটে এক শিফটের কার্যক্রমেই চলছে না, সেখানে আবার নতুন শিক্ষক ছাড়াই চলছে ডাবল শিফট।

দেশে ৪৯টি পলিটেকনিকের মধ্যে ২১টি পলিটেকনিকে নেই কোনো অধ্যক্ষ। উপাধ্যক্ষরা ওই পদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছেন। এ ছাড়া, উপাধ্যক্ষ পদের এক ধাপ নিচের পদ চিফ ইনস্ট্রাকটরাও সরকারি পলিটেকনিকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।

তথ্য অনুযায়ী—৪৯টি পলিটেকনিকের মধ্যে ১৮টিতে জনবলের পদ রয়েছে ১৯৩২টি। এর মধ্যে ১ হাজার ১০টিই শূন্য। আর ৪৯ টিতে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ মোট শিক্ষকের পদ রয়েছে ২ হাজার ৫০৯টি। এর প্রায় অর্ধেক শিক্ষকের পদ শূন্য। যদিও সম্প্রতি স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের মধ্যেমে মোট শূন্য পদের ৫৩০ শিক্ষক শুধু প্রকল্প চলাকালীন সময়ের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—আরো ৫১৭ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

২০০৮-০৯ শিক্ষা-বর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানে ৩৮টি শিক্ষক পদ থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মাত্র ৪ জন শিক্ষক রয়েছে। অন্য পলিটেকনিক থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৯ জন শিক্ষক এসে এখানে ক্লাস নিচ্ছেন। যেখানে প্রতি বিভাগে ৭ জন শিক্ষক প্রয়োজন, সেখানে রয়েছেন একজন করে। এই পলিটেকনিকে বাংলা বিষয়ের জন্য কোনো শিক্ষক নেই, ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক বাংলা পড়ান। এখানে দুই ব্যাচে ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। নরসিংদি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এখানে ডেপুটেশনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, 'কোনোমতে শিক্ষাকার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে নতুন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে কিছুটা সমস্যার সমাধান হতে পারে।'

নরসিংটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক সংকট থাকলেও এ প্রতিষ্ঠান থেকে কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিকে ২ জন, নওগাঁ পলিটেকনিকে ১ জন এবং ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটে ১ জন শিক্ষককে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে ৩৬ পদের বিপরীতে শিক্ষক ছিল মাত্র ১৪ জন। একটি প্রকল্প থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও এখন এই প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ জন শিক্ষক কম রয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সুশীল কুমার পাল বলেন, 'আমরাও প্রকল্পের শিক্ষক। দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছি। তিন মাস পর পরে থোক বরাদ্দ পাচ্ছি। বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্প থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই শিক্ষকরা থাকবেন ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত। এর পর কী হবে—অধিদপ্তরই বলতে পারবে।'

সরকারি ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউট। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সব শিক্ষাকার্যক্রমই চলছে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৬টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ৭ জন। এ ছাড়া, ৪ জন শিক্ষক অন্য পলিটেকনিক থেকে ডেপুটেশনে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মান্নান বলেন, 'এই শিক্ষকদের দিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মাস্টার রোলেও শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।'

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহজাহান মিয়া বলেন, 'পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনেক পদ শূন্য রয়েছে। আগে নিয়োগ-বিধি ছিল না। এখন হয়েছে। পদ শূন্য হলে পিএসসির কারণেই শিক্ষক নিয়োগে বিলম্ব হয়।'

অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বলেন, 'স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো অনেক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।'

সব সমাধানই অস্থায়ী:

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, তা পুরোটাই অস্থায়ী। পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প শেষ হবে ২০১৫ সালের জুনে। তবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন—এটি ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। শুধু প্রকল্প চলাকালে সময়ের জন্য ইতিমধ্যে ৫৩০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, আরো ৫ শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং পলিটেকনিকের শিক্ষকরা বলছেন—সরকারের এই উদ্যোগ অস্থায়ী। প্রকল্প শেষ হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষকরাও চাকরি হারাবেন। অনেকে চাকরি স্থায়ী হওয়ার আশায় বছরের পর বছর অপেক্ষা করবেন। বিনা বেতনে চাকরি করবেন। স্থায়ী হতেও পারে, নাও পারে। এর ৬ বছর আগে একটি প্রকল্প শেষ হলেও ওই প্রকল্পের শিক্ষক এখনো স্থায়ী হননি। ওই সময় নিয়োগ পাওয়া অর্ধেকের বেশি শিক্ষক চলে গেছেন। এখন থোক বরাদ্দ থেকে তিন মাস পরপর বেতন পাচ্ছেন। সাময়িক সমাধান হলেও ২০১৬ সালের জুনের পর আবার বড় ধরনের শিক্ষক সংকটে পড়তে হবে পলিটেকনিক কলেজগুলোকে।

প্রিয় পাঠক, পোস্টটি পড়ার পর আপনার ভালো লাগা, মন্দ লাগা, জিজ্ঞাসা কিংবা পরামর্শ প্রদানের জন্য দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য প্রদান করুন। যা আমাদের ব্লগিং চালিয়ে যেতে অনেক উৎসাহ অনুপ্রেরণা জাগাবে। আর প্রাসঙ্গিক যেকোন প্রশ্নের সমাধান পেতে মেইল করুন contact@projukte.com ঠিকানায় অথবা অধিক জরুরী প্রয়োজনে কল করুন ০১৭৫৪৭২০২৫৫ নম্বরে। আপনার একটি মন্তব্যই আমাদের নিকট অনেক মূল্যবান। সাথেই থাকুন প্রযুক্তি ডট কম বাংলা ব্লগের সাথে।
ধন্যবাদান্তে,
প্রযুক্তি ডট কম

আপনার মূল্যবান মন্তব্য প্রদানের জন্য ধন্যবাদ